কি ভাবছেন? শিক্ষা আবার অভিশাপ হয় কিভাবে? এমন শিরোনাম দেখে অবাক লাগছে। জ্বি হ্যাঁ, শিক্ষাও অভিশাপ হয় যদি তা নিয়ম বহির্ভূত পথে চলতে শুরু করে। শিক্ষার প্রয়োগ সঠিক ভাবে না করলেও তা অভিশাপ হয়। তবে আজ সেসব আলোচনা করবো না, আজ আলোচনা করতে এসেছি অনলাইন শিক্ষা নিয়ে। আসুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
“Online Education” বর্তমান সময়ে বহুল প্রচলিত একটি কথা।অনলাইন শিক্ষা বলতে মূলত কি বোঝায়, আপনি যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে যেকোনো বিষয়ে জানতে ও শিখতে পারবেন, তবে তার বিনিময়ে কিছু টাকা দিয়ে এমবি কিনতে হবে অথবা ওয়াইফাই সংযোগ থাকতে হবে, তাই না? স্কুল লাইফে যখন রচনা লিখতাম তখন ইন্টারনেট সম্পর্কিত যেকোনো রচনার প্রথম লাইন টা বেশ একটু চালাকি করে ঠিক এভাবেই লিখে ফেলতাম ” বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ”সত্যিই তাই, বর্তমান সময়টি ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে গেছে, শুধু পড়াশুনা না, আপনি যেকোনো কাজে ইন্টারনেট এর সহায়তা পাচ্ছেন।
আচ্ছা, সেসব নিয়ে পরে আলোচনা হবে এখন আসি অনলাইন শিক্ষার দিকে। আয়মান সাদিকের টেন মিনিট স্কুল বলুন বা সাধারণ একটি অনলাইন এডুকেশন পেজ সব জায়গাতেই পাবেন জানা অজানা হাজারো প্রশ্নের উত্তর, এখন তো আবার গল্পের বইয়েরও সফট কপি পাওয়া যায়। ফেসবুক থেকে শুরু করে ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, এমনকি বিভিন্ন এ্যাপ ও আছে যেখানে অনেক কিছু জানা ও শেখা যায়। অন্য দেশের কথা জানি না, তবে বাংলাদেশে কিন্তু online education কথাটি ভালোই চলছে তাই না?
তবে আপনার কি মনে হয়, সত্যিই কি সবাই উপকৃত হচ্ছে এই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে! আমি অন্যের কথা না বলি, নিজের কথাই শেয়ার করি আপনাদের সাথে, এইতো বছর 3 আগে, আমি কলেজে পড়ি, HSC 1st year এর ছাত্রী। বাসা থেকে কোনো ফোন দেয়নি আমাকে, বলেছিলো HSC তে ভালো রেজাল্ট করলে দিবে,যাই হোক আমি তখন কি করতাম জানেন? বাবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতাম, মা বলতো “কিরে কি করিস ?” আমার উত্তর “এইতো অনলাইনে পড়তেছি” বিশ্বাস করুন অধিকাংশ সময় এটা করতাম, অবশ্য মুভি দেখতাম অনেক, ফেসবুকিং করতাম না তখনও। এই আমার কাহিনী, শেষমেষ পরীক্ষায় ডাব্বা।
আপনি কি বিশ্বাস করেন প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭ জন ঠিক আমার মতোই করে, আর এখন তো ক্লাস ৫ এর বাচ্চার কাছেও পার্সোনাল ফোন থাকে, আমি না হয় বাবার ল্যাপটপ নিতাম, কিন্তু ওদের তো ফোন হাতের মুঠোয়। আমি কিন্তু অনলাইন শিক্ষা টাকে খারাপ বলছি না, সবকিছুরই ভালো খারাপ দুই দিকই থাকে এটা আমরা সবাই জানি। তেমনই অনলাইন শিক্ষারও খারাপ ভালো দুদিকই আছে। অনলাইন শিক্ষার খারাপ দিক আছে এটা ঠিক, তবে এর যে কতো ভালো দিক আছে তা বলে শেষ করা সম্ভব না।
এই যে ফেসবুক, ইউটিউব দেখে রান্না টিউটোরিয়াল, ইংরেজী শেখার ক্লাস, সেলাই এর কোর্স আরো কতো কিছু যে জানা ও শেখা যায় তা বলে শেষ করা যায় না। এই যে আমার কথাই ভেবে দেখুন, আমি গল্পের বই পড়তে খুব ভালোবাসি, কিন্তু ছাত্রী মানুষ, এতো বই তো আর কেনা যায় না! তাহলে উপায়? আরে এখন তো বই এর সফট কপি পাওয়া যায়, আমার এই গল্পপিপাসু মনকে শান্ত করার জন্য অনলাইনেই গল্পের বই পড়ি, কখনো বা অডিও গল্প শুনি। কতো উন্নত ব্যবস্থা ভেবে দেখেছেন।
একাডেমিক পড়াশুনা তো অবশ্যই সঠিক ভাবে পাওয়া যায়, পাশাপাশি হাজারো জানা অজানা তথ্য পাওয়া যায় এই ইন্টারনেট এর যুগে। গুগল এ কি চান, শুধু একবার বলুন বা লিখুন সাথে সাথে উত্তর পৌঁছে যাবে আপনার কাছে। ছোটদের জন্য বর্ণমালা পরিচয় থেকে শুরু করে কবিতা, গল্প, গান কি নেই! এসবের ফলে শিশুরা খেলার ছলেই পড়া শিখে যাচ্ছে। তাই নয় কি? আমার এক ফ্রেন্ড আছে, ঢাবি তে পড়ে, ও যখন বুঝলো যে অনলাইনে সবকিছুই পড়া যায়, তখন পড়তে শুরু করলো নিয়মিত। ও তখন মাঝে মাঝে আমায় বলতো” দোস্ত এতো ভালো করে বোঝা যায় এই ভিডিও গুলো থেকে, আগে যে কেনো পড়িনি” ব্যাপার টা মজার তাই না!
আসলে ইন্টারনেট এমন একটি বিষয় যা আপনার জীবনে আপনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই থাকবে, আপনি খারাপ দিকে নিলে খারাপ আর ভালো ভাবে গ্রহণ করলে ভালো। সবকিছুই তো আর সর্বগুণ সম্পন্ন হয় না তাই না, খারাপ ভালো মিশিয়েই তো পরিপূর্ণতা পাওয়া যায়। অনলাইন শিক্ষা বাংলাদেশে আরো বিস্তর হোক, আমাদের দেশের প্রতিটা শিশুর কাছে পৌঁছে যাক এই শিক্ষা, যেনো কেউ বঞ্চিত না হয়। আমাদের দেশ যেনো খুব শীঘ্রই উন্নত দেশে রুপান্তরিত হয়। তরুণ সমাজ অনলাইন শিক্ষা কে আরো বিস্তর করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাক এই আশা করি।অনলাইন শিক্ষা যেনো দেশের প্রতি টা ঘরে আশীর্বাদ বয়ে আনে।
# মূল লেখা পড়তে দেখুন: অনলাইন শিক্ষা: আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ (টকস্টোরি)